Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২৩

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২৩
মোঃ ফরিদুল হাসান
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১১.৫২ শতাংশ। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এই খাতের  ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু  ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি থেকে দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য জোগান বর্তমানে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বন্যা, খরা, ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগবালাই ছাড়াও ইঁদুর প্রতিনিয়তই কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল এর ব্যাপক ক্ষতি করছে। কৃষকসমাজ তাদের সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেখা যায় কৃষকের উৎপাদিত ফসলের একটি বড় অংশ ইঁদুর দ্বারা নষ্ট হয়। ইঁদুর মাঠ থেকে শুরু করে ফসল কর্তনের পরেও গুদামজাত অবস্থায় বা গোলায় তোলার পরেও ক্ষতি করে। ইঁদুর যে শুধু ফসলের ক্ষতি করে তা না মানুষেরও ব্যাপক ক্ষতি করে এবং রোগজীবাণুর বাহক হিসেবেও কাজ করে। এ ছাড়া সারাবিশ্বে বর্তমানে পোলট্্ির শিল্প ইঁদুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১৯৮৩ সাল থেকেই” ইঁদুর নিধন অভিযান” পরিচালনার  মাধ্যমে  কৃষকদের ফসলের মাঠে সময়মতো ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই ইঁদুর নিধন কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে।
ইঁদুর খুব চতুরপ্রাণী। এই অনিষ্টকারী মেরুদ-ী প্রাণীটি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক। একটি ইঁদুর প্রতিদিন তার দেহের ওজনের ১০ ভাগ খাদ্য গ্রহণ করে। এরা যা খায় তার ৪/৫ গুণ নষ্ট করে। ইঁদুরের অনবরত কাটাকাটির অভ্যাস রয়েছে। এর সদা বর্ধিষ্ণু দাঁত রয়েছে, ক্ষয়ের মাধ্যমে দাঁতের এই বৃদ্ধিরোধ করার জন্য ইঁদুর সবসময় কাটাকাটি করে। এক গবেষণায় জানা যায় বাংলাদেশে ইঁদুর প্রায় ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। এরা যে শুধু কাটাকুটি করে আমাদের ক্ষতি করে তাই নয়, এরা মানুষ ও পশুপাখির মধ্যে প্লেগ, জন্ডিস, টাইফয়েড, চর্মরোগ, আমাশয়, জ্বর,কৃমিসহ প্রায় ৬০ প্রকার রোগ জীবাণুর বাহক ও বিস্তারকারী। ইঁদুর দ্বারা ফসলের ক্ষতি কমানো গেলে একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্য দিকে তেমনি খাদ্যে মলমূত্র ও লোম সংমিশ্রণ বন্ধ করা গেলে স্বাস্থ্য, নিরাপদ খাদ্য এবং পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের বিস্তারও কমে যাবে। ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করা আপাত খুব কঠিন মনে হলেও সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে সঠিক কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে এদের সংখ্যা কার্যকরভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব।
ইঁদুর  সর্বভুক ও নিশাচর প্রাণী, এরা যে কোন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নিয়ে দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। অনুকূল পরিবেশে এক জোড়া প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুর বছরে প্রায় ১৫০০-২০০০টি বংশধর সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রতিবারে ৪-১২টি বাচ্চার জন্ম দেয়। বাচ্চা প্রসবের ২ দিনের মধ্যেই স্ত্রী ইঁদুর পুনরায় গর্ভধারণ করতে পারে। বছরে প্রায় ৬-৮ বার বাচ্চা দেয়, ইঁদুরই একমাত্র প্রাণী যা যেকোন পরিস্থিতির আলোকে বাচ্চা জন্মদান বাড়াতে বা কমাতে সক্ষম। জন্মের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ইঁদুর পূর্ণবয়স্ক হয়ে প্রজননে সক্ষমতা লাভ করে। দ্রুত বংশবিস্তারকারী স্তন্যপায়ী এ প্রাণীটি আমাদের বিভিন্ন মাঠ ফসলসহ বিভিন্ন ফল ও শাকসবজির মাঠে এবং গুদামে ব্যাপক ক্ষতি করছে। আমাদের বাসাবাড়ির বইপত্র, কাপড় চোপড় আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি করছে। এর পাশাপাশি বাঁধ, রেললাইন, জাহাজ, বন্দর, অফিস, মাতৃসদন সেচের  নালাসহ  সর্বত্র ইঁদুরের  বিচরণ রয়েছে। ধান উৎপাদনকারী  প্রতিটি দেশে কৃষক, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা ইঁদুরকে গুরুত্বপূর্ণ বালাই হিসেবে বিবেচনা করে। বিভিন্ন দেশে শুধু ধান কর্তন থেকে গুদামে রাখা অবস্থায় ২-২৫ ভাগ পর্যন্ত ইঁদুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বৃষ্টিনির্ভর ও সেচ সুবিধাযুক্ত ধানের জমিতে ফসল কাটার পূর্বে শতকরা ৫-১৭ ভাগ ক্ষতি হয়। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গমে ৪-১২ ভাগ, গোলআলুর ৫-৭ ভাগ, আনারসের ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭% এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫% ক্ষতি করে। এ ছাড়া ইঁদুর বর্তমানে পোলট্রি ফার্মে ছোট বাচ্চা ও ডিম খেয়ে ফার্মের মালিকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোলট্রি শিল্পে ইঁদুর দ্বারা ক্ষতির দিকে লক্ষ রেখে মুরগীর খামারিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং সমন্বিতভাবে ইঁদুর দমনে অংশগ্রহণ করতে হবে। কাজেই স্থানকাল পাত্রভেদে সঠিক কৌশলগত ও সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করতে হবে এবং এর মাধ্যমে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, ইঁদুর বাহিত রোগ ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে।          
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বিগত পাঁচ বছরে ইঁদুর নিধন অভিযান কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে আমন ফসল রক্ষার পরিমাণ নি¤েœ দেয়া হলো :
ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলাফল
ইঁদুর  নিধন  অভিযান  ২০২৩ এর  উদ্দেশ্য
   কৃষক, কৃষাণী, ছাত্রছাত্রী, বেসরকারি  প্রতিষ্ঠান, আইপিএম/আইসিএম এসব ক্লাবের সদস্য, সিআইজি, ডিএই এর বিভিন্ন কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোসহ সর্বস্তরের জনগণকে ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করা;
    ইঁদুর দমনের জৈবিক ব্যবস্থাপনাসহ লাগসই প্রযুক্তি কৃষি কর্মীদের মাধ্যমে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো;
    ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিল্পকারখানা ও হাঁস-মুরগির খামার ইঁদুরমুক্ত রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা;
    আমন ফসল ও অন্যান্য মাঠ ফসলে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে রাখা;
    গভীর ও অগভীর নলকূপের সেচের নালার ইঁদুর মেরে পানির অপচয় রোধ করা;
    রাস্তাঘাট ও বাঁধের ইঁদুর নিধনের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা;
    ইঁদুরবাহিত রোগের বিস্তার রোধ করা এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা;
    সম্ভাব্য ক্ষেত্রে গণযোগাযোগ বিশেষ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যাপারে জোর দেয়া।
অভিযানের সময় ও উদ্বোধন
এক মাসব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযান সারাদেশে একযোগে পরিচালনা করা হয়। জাতীয়পর্যায়ে ইঁদুর নিধন অভিযান, ২০২৩ এর উদ্বোধনের পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অঞ্চল, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে উদ্বোধন করা হবে। গত বছরের অভিযানের  উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইঁদুর নিধনকারীদের মাঝে পুরস্কার  প্রদান করা হবে। অঞ্চল, জেলাপর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট জেলার সংসদ সদস্য/চেয়ারম্যান, পার্বত্য জেলা পরিষদ/জেলা পরিষদ/প্রশাসক/উপজেলা চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/মেয়র অথবা তার মনোনীত ব্যক্তি দ্বারা করতে হবে। উপজেলাপর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য/উপজেলা চেয়ারম্যান/তার মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা করতে হবে।
ইঁদুর নিধনে পুরস্কার প্রদান
জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২ বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় ও আঞ্চলিক  পর্যায়ে পুরস্কার দেয়া হবে। অঞ্চলে অতিরিক্ত পরিচালকগণ  নিজ  অঞ্চলের পুরস্কার পাবারযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাইপূর্বক মনোনয়নের তালিকা সদর দপ্তরে প্রেরণ করেন। পরবর্র্তীতে সদর দপ্তরে প্রেরিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে জাতীয় ও অঞ্চলপর্যায়ের পুরস্কারের প্রাথমিক মনোনয়ন প্রদান করা হয় যা জাতীয় কমিটির মাধ্যমে  চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। জাতীয়পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত বছরের ইঁদুর নিধনকারীদের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ০৫টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হবে। যারা পুরস্কারের  জন্য নির্বাচিত হন তাদের ক্রমানুসারে ১টি ক্রেস্ট, ১টি সনদপত্র ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে।
ইঁদুর জীব বৈচিত্র্যের অংশ হলেও আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এবং নিরাপদ পরিবেশের জন্য এটি দমন অত্যন্ত জরুরি। ইঁদুরের সমস্যা দীর্ঘদিনের, এ সমস্যা পূর্বেও ছিল, বর্তমানেও রয়েছে। ইঁদুর দমন পদ্ধতি পোকা ও রোগবালাই দমন পদ্ধতির চেয়ে  সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ ইঁদুর অত্যন্ত চতুর এবং এখানে বিষটোপ ও ফাঁদ লাজুকতার সমস্যা রয়েছে। ইঁদুর সর্বদা খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য স্থান পরিবর্তন করে তাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সঠিক পদ্ধতি, সঠিক স্থান ও সঠিক সময়ে একযোগে ইঁদুর নিধন করা প্রয়োজন। এককভাবে ইঁদুর নিধন করলে দমন ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও গণচীনে নির্দিষ্ট  দিনে ও নির্দিষ্ট সময়ে এভাবে ইঁদুর নিধন করা হয়। ইঁদুর দমনের বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে সকলকে অবহিত করার জন্য এই পুস্তিকায় ইঁদুর দমন প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্য সহজভাবে এবং সংক্ষিপ্ত আকারে সংযোজন করা হয়েছে। ইঁদুর দমনের কলাকৌশল অধিক সংখ্যক কৃষকের নিকট পৌঁছানোর জন্য প্রত্যেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তার ব্লকের কমপক্ষে ৬০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। একা ইঁদুর নিধন করার সাথে সাথে অন্যদেরও ইঁদুর নিধনে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। একা ইঁদুর নিধন করলে সাময়িকভাবে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে, তবে অল্প কিছুদিন পরই আবার অন্যস্থানের ইঁদুর এসে সমস্যার সৃষ্টি করবে। কাজেই ফসল ও সম্পদের ক্ষতিরোধ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দূষণমুক্ত পরিবেশের স্বার্থে ইঁদুর সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষেত-খামার, বসতবাড়িসহ সর্বত্র ইঁদুরের উপস্থিতি যাচাই করে ইঁদুর দমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।

লেখক : পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল : ০১৭১২২১৮৮৭০  ই-মেইল : dppw@dae.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon